সমস্ত লেখাগুলি

মিশরে লিপ ইয়ার -
Tushar Gorai
March 18, 2025 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:11 | likes:0 | share: 1 | comments:0

পুরাতত্ত্ববিদদের অনুমান আনুমানিক ৪২৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরীয়রা চন্দ্র মাসের ভিত্তিতে বছরের হিসেব রাখতে শুরু করে। নীল নদের বন্যার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হয় এ পদ্ধতি। খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২০০০ অব্দে সৌর বছরের প্রবর্তন হয় মিশরীয় পঞ্জিকায়। নীল নদের প্রথম বন্যার আগমন কাল  বর্তমানের জুন মাস কে ধরেছিল তারা। এই সময় আকাশে লুব্ধক(Sirius) নক্ষত্রের আবির্ভাব হতো এর থেকে তারা নতুন বছর গণনা শুরু করে। মিশরীয়রা সৌর বছর গণনা করত ৩৬৫ দিনে। ৩০ দিনে এক মাস এবং ১২ মাসে এক বছর হিসেবে সৌরবছর গণনা করতো তারা। বছরের শেষে আরো পাঁচ দিন যুক্ত করে বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা অর্চনা করত। চার বছর অন্তর ৫ দিনের বদলে ৬ দিন যুক্ত করে তারা পঞ্জিকা তৈরি করত কারণ মিশরের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৩৬৫ ১/৪ দিনে এক বছর হয় সেটা তারা ধরতে পেরেছিলেন। আধুনিক লিপ ইয়ার মিশরীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞদের আবিষ্কার। 



জলাভূমি সংরক্ষণ: এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ -
Tushar Gorai
Feb. 2, 2025 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:59 | likes:0 | share: 2 | comments:0



জলাভূমি, প্রাকৃতিক হোক বা কৃত্রিম, আমাদের দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে একটি। পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এগুলোর গুরুত্ব অসীম। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, নগরায়ন, কৃষি সম্প্রসারণ, কঠিন বর্জ্য ফেলা এবং শিল্পায়নের ফলে এই মূল্যবান অঞ্চলগুলির অবক্ষয় ঘটছে। জলাভূমির জাতীয় গুরুত্ব উপলব্ধি করে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এগুলোর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বহু-মাত্রিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে।  


জলাভূমি পৃথিবীর অন্যতম উর্বর বাস্তুতন্ত্র এবং এটি জীববৈচিত্র্য রক্ষা, জলচক্র নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন প্রজাতির জীবের আবাসস্থল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ধরনের পরিবেশ পানিশোধন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং জলসম্পদের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। পাশাপাশি, জলাভূমি মৎস্যচাষ, কৃষিকাজ এবং পর্যটনের মাধ্যমে অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। জলাভূমির এই বহুমুখী উপকারিতা সত্ত্বেও, মানুষের অসচেতনতা এবং অব্যবস্থাপনার ফলে এটি ক্রমাগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।  


নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে জলাভূমিগুলি দখল ও দূষণের শিকার হচ্ছে, যেখানে অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কার্যক্রম এবং শিল্প বর্জ্য নিঃসরণ সরাসরি জলাভূমির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কৃষি সম্প্রসারণের কারণে জলাভূমিগুলিকে কৃষিজমিতে রূপান্তর করা হচ্ছে, যার ফলে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে এবং জলচক্র ব্যাহত হচ্ছে। এর পাশাপাশি কঠিন বর্জ্য ফেলার প্রবণতা জলাভূমির স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট করে এবং পানির গুণমান হ্রাস করে, যা বিভিন্ন জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।  


এই সংকট মোকাবিলায় জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য কয়েকটি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা জলাভূমির উপকারিতা সম্পর্কে অবগত হয় এবং সংরক্ষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে। কঠোর পরিবেশগত আইন ও নীতিমালা কার্যকর করে জলাভূমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন ও শিল্প দূষণ প্রতিরোধ করা যায়। স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা হলে সংরক্ষণ প্রচেষ্টা আরও কার্যকর হবে, কারণ তারাই সরাসরি জলাভূমির উপর নির্ভরশীল। বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে জলাভূমির পরিবেশগত কার্যকারিতা বোঝা এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার কৌশল বিকাশ করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত জলাভূমিগুলির পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।  


জলাভূমি আমাদের পরিবেশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা অবিলম্বে সংরক্ষণের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যদি আমরা সচেতনভাবে জলাভূমিগুলি রক্ষা করতে না পারি, তাহলে এটি ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। জলাভূমির গুরুত্ব অনুধাবন করে, যথাযথ নীতিমালা প্রয়োগ, জনগণের সম্পৃক্ততা এবং বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণ পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা জলাভূমির টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই মূল্যবান বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণে আমাদের সক্রিয় ভূমিকা রাখা উচিত।

গ্রিন টেকনোলজি: ভবিষ্যতের পথ -
Tushar Gorai
Jan. 31, 2025 | টেকনোলজি | views:173 | likes:0 | share: 1 | comments:0



গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, প্রাকৃতিক সম্পদের হ্রাস, এবং ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবের কারণে, গত দুই দশক ধরে  দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব  প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের বাস্তবায়ন নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বলতে প্রচলিত শক্তি সম্পদ ব্যবহার করে শক্তির চাহিদা মেটানো বোঝায়, যা পরিবেশের ক্ষতি করে না এবং গ্রীন টেকনোলজি বলতে পরিবেশবান্ধব পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎসের ব্যবহার বোঝায়।



গ্রীন টেকনোলজির ধারণা হল এমন পণ্য, সিস্টেম এবং কাঠামোর সৃষ্টি এবং প্রয়োগ যা প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলি রক্ষা করার লক্ষ্য রাখে। সহজভাবে বলতে গেলে, "গ্রীন টেকনোলজি" বলতে এমন ডিভাইস, পরিষেবা বা প্রক্রিয়া বোঝায় যা খুব কম বা কোনো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে না, ব্যবহার করা নিরাপদ এবং সমস্ত জীবনের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর জলবায়ু উৎসাহিত ভিত্তিস্থাপন করে। 


গ্রীন টেকনোলজি বিভিন্ন উদ্ভাবনকে অন্তর্ভুক্ত করে যা পরিবেশের উন্নতি এবং সম্পদের দক্ষতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এগুলি মূলত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন যেমন সৌর এবং বায়ু শক্তি থেকে শুরু করে উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমাধান। এই প্রযুক্তিগুলি জলবায়ু পরিবর্তন এবং সম্পদের অভাবের মতো বৈশ্বিক পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা প্রচলিত অনুশীলন থেকে উন্নত বিকল্পগুলিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নির্দেশ করে।


এই প্রযুক্তির সুযোগগুলি বিশাল। অর্থনৈতিকভাবে, তারা নতুন বাজার খুলে দেয় এবং চাকরি তৈরি করে। এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবসায়িক উদ্ভাবনকেও উৎসাহিত করে, কোম্পানিগুলিকে নতুন পণ্য এবং পরিষেবা বিকাশ করতে সক্ষম করে যার জন্য ক্রমবর্ধমান ভোক্তার চাহিদা পূরণ করে। পরিবেশগতভাবে, সবুজ প্রযুক্তি কার্বন নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবদান রাখে। সামাজিকভাবে, তারা জীবনের গুণমান উন্নত করে এবং একটি  ন্যায়সঙ্গত বিশ্বের দিকে একটি পদক্ষেপ হিসাবে কাজ করে।


 ভবিষ্যত শুধুমাত্র নতুন গ্যাজেট এবং সমাধান সম্পর্কে নয়; এটি আরও সহজ - সরল জীবনযাপনের দিকে মানসিকতার পরিবর্তন সম্পর্কে। ভারতের ক্রমাগত বিকশিত নীতিমালা এবং সংস্কারগুলি ব্যবসা করার সহজতা এবং জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের লক্ষ্য অর্জনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সবুজ প্রযুক্তির দ্রুত গ্রহণের জন্য একটি পথ পরিষ্কার করছে এবং বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা প্রদান করছে। ভারতের 'আস্পিরেশনাল ডিস্ট্রিক্ট প্রোগ্রাম' স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিকে কাজে লাগিয়ে এমন একটি রূপান্তর চ্যানেল করার জন্য সেরা উদ্যোগ, কারণ এটি উন্নয়নের আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের মধ্যে বৈষম্য দূর করে। এই প্রোগ্রামটি, এর শক্তি রূপান্তরের বর্ধিত সুযোগ সহ, ভারতের পরিবেশবান্ধব শক্তির বিপ্লবের জন্য একটি বাতিঘর হিসাবে কাজ করে এবং বিশ্বব্যাপী পুনরাবৃত্তিযোগ্য একটি মডেল প্রদান করে।



অস্ট্রেলিয়ান গ্রিনসের সেনেটর বব ব্রাউনের কথাগুলি মনে রাখতে হবে: "ভবিষ্যত হয় সবুজ হবে, নয়তো কিছুই হবে না।"

পরিবেশ ভাবনায় - বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -
Tushar Gorai
Jan. 20, 2025 | পরিবেশ | views:151 | likes:5 | share: 5 | comments:0

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যকার সুষম সম্পর্ক স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতি মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয় সাধন ব্যতীত মানুষের পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাঁর এই বিশ্বাসের প্রতিফলন আমরা পাই শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনের প্রতিষ্ঠায়।

শান্তিনিকেতন
শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ পরিবেশবান্ধব শিক্ষার একটি নতুন মডেল তৈরি করেন। তাঁর মতে, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে শিক্ষার্থীরা কেবল পঠনপাঠনেই নয়, বরং তাদের নৈতিক ও সৃজনশীল বিকাশেও অগ্রগামী হবে। শান্তিনিকেতনে শিক্ষার্থীরা মুক্ত আকাশের নীচে প্রকৃতির কোলে পাঠ গ্রহণ করত। তিনি মনে করতেন, প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করলে শিক্ষার্থীদের কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তারা জীবন সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়।

শ্রীনিকেতন
শ্রীনিকেতনের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ গ্রামীণ জীবনের উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। তিনি গ্রামীণ সমাজের উন্নয়ন, কৃষি আধুনিকীকরণ, এবং স্বনির্ভরশীলতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। কৃষকদের জীবনের মানোন্নয়নে তিনি আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও পদ্ধতির প্রচলন ঘটান। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল গ্রামগুলোকে শক্তিশালী করে তোলা, যাতে তারা শহরের উপর নির্ভরশীল না হয়।

বৃক্ষরোপণ উৎসব ও পরিবেশ সচেতনতা
রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ককে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি ১৯২৫ সালে শান্তিনিকেতনে প্রথম বৃক্ষরোপণ উৎসবের সূচনা করেন। এই উৎসবের মাধ্যমে তিনি মানুষকে প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল হতে উদ্বুদ্ধ করেন। বৃক্ষরোপণ শুধু পরিবেশ সংরক্ষণের উপায়ই নয়, এটি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে মজবুত করার একটি প্রতীকী পদক্ষেপ।

লেখনীতে পরিবেশ ভাবনা
রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্য ও বক্তৃতার মাধ্যমে শহর ও গ্রামের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তিনি শহরের অতি-বাণিজ্যিকীকরণ এবং প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্নতার বিরোধিতা করেছেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ জাপান যাত্রীতে তিনি উল্লেখ করেছেন, "পৃথিবীর শহরগুলো প্রকৃতি ও মমতার মিলনে তৈরি হওয়া উচিত। কিন্তু বাণিজ্যিক চাহিদার কারণে শহরগুলো মানবিক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে।"

আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা
বর্তমান পরিবেশ সংকটের প্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়ের ফলে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা মোকাবিলায় তাঁর দর্শন আমাদের দিকনির্দেশনা দিতে পারে। তাঁর বিশ্বাস ছিল, প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে মানুষ সঠিক পথে অগ্রসর হতে পারবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই পরিবেশ ভাবনা কেবল তাঁর সময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি সর্বজনীন এবং চিরন্তন। তাঁর শিক্ষাব্যবস্থা, গ্রামীণ উন্নয়ন ও পরিবেশ সচেতনতা আজও আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস ।

তথ্যসূত্র:

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবেশ ভাবনা


শরৎ সাহিত্যে ধর্ম ও সংস্কার -
Tushar Gorai
Jan. 17, 2025 | জীবনী | views:280 | likes:3 | share: 6 | comments:0

স্বামী বিবেকানন্দের বেদান্ত দর্শন ভারতের জনমানসে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বরাবরই। তবে শরৎসাহিত্যে বেদান্ত দর্শনের প্রবল বিরোধিতা লক্ষ করা যায় এমনকি ঈশ্বরকেও তিনি বিদ্রুপ করেছেন। এমন কাজ তিনি করে দেখিয়েছেন যখন হিন্দু সমাজের বাঁধন বেশ শক্ত ছিল। তখন হিন্দু সমাজ পুরোপুরি ধর্মীয় প্রভাবে আচ্ছন্ন ছিল। এমতাবস্থায় তিনি লিখছেন ," কোনো  ধর্মগ্রন্থই কখনও অভ্রান্ত সত্য হতে পারে না। বেদও ধর্মগ্রন্থ। সুতরাং, এতেও মিথ্যার অভাব নেই। যা বুদ্ধির বাইরে, তাকে বুদ্ধির বাইরে বলেই ত্যাগ করব। মুখে বলব, অব্যক্ত , অবোধ্য, অজ্ঞেয় , আর বাজে কথায় তাকেই ক্রমাগত বলবার চেষ্টা , জানবার চেষ্টা কিছুতেই করবো না। যিনি করবেন তাকেও কোনো মতে সহ্য করবো না "। ঠাট্টা করে তিনি বলছেন , " ... নির্গুণ নিরাকার, নির্লিপ্ত, নির্বিকার এসব কেবল কথার কথা। এর কোনো মানে নেই। যে মুখে বলছেন জানা যায় না, সেই মুখেই আবার এত কথা বলছেন যেন এইমাত্র সমস্ত স্বচক্ষে দেখে এলেন। যাকে কোন মতেই উপলব্ধি করা যায় না, তাকেই উপলব্ধি করবার জন্য পাতার পর পাতা, ব‌ইয়ের পর বই লিখে যাচ্ছেন। কেন? "  ইতিহাসকে কেউ যদি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঘেটে দেখেন তবেই তার সামনে আসল সত্যটা উন্মোচন হবে। তার লেখা 'চরিত্রহীন' বইতে উপনিষদ সম্পর্কে খুব সুন্দর করে ছোট্ট কথার মধ্যে  তীব্র বিদ্রুপ করেছেন। দিবাকর ও কিরণময়ীর আলোচনার মধ্যে দিয়ে উপনিষদ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার যুক্তি-তর্ক দেখা যায়। শরৎচন্দ্র এর মধ্যে দিয়ে বোঝাতে চাইছিলেন যা সত্য তাকে সকল সময় সকল অবস্থায় গ্রহণ করা প্রয়োজন ,এতে বেদই মিথ্যা হোক আর শাস্ত্রই মিথ্যা হয়ে যাক , সত্যের চেয়ে বড় কিছু নয়। বর্তমানে মানুষের তর্কের ঝোঁক এতটাই বেশি যে সহজ সরল যুক্তিগুলোকে মানুষ উপেক্ষা করে দেয়। তিনি এই বিষয়টিকে তার লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন সেখানে ‌।

শরৎচন্দ্র তার সাহিত্যের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজে জাতপাতের সমস্যা গুলিকে মুক্তির পথে অন্যতম বাধা হিসেবে প্রস্ফুটিত করতে চেয়েছিলেন। কোন একটি অভ্যাস সেটা সমষ্টির মেনে চলার মাধ্যমে তা সংস্কারে পরিণত হয়। সংস্কার যদি আমাদের গুণাবলী ,মহত্ব ,দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ এবং মনুষ্যত্ববোধকে ক্ষুন্ন করে তাহলে তা কোনমতেই সংস্কার নয়, তা একটি কুসংস্কার। 'গৃহদাহ'- এ রাম বাবু চরিত্রের মধ্য দিয়ে এবং বহু জায়গায় বহু চরিত্রের মধ্য দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন যে হিন্দু সমাজে জাত পাতের সমস্যাটা সবসময় মোটা অর্থে নিচুতার সঙ্গে জড়িয়ে নেই। তা করুণা মহৎ গুণ, মমতা, ভালবাসার সঙ্গেও জড়িয়ে থাকে। মহিমের ভাষায়, " যে ধর্ম অত্যাচারের আঘাত থেকে নিজেকে এবং অপরকে রক্ষা করিতে পারেনা ,বরঞ্চ তাহাকে মৃত্যু হইতে বাঁচাইতে সমস্ত শক্তি অহরহ উদ্যত রাখিতে হয়, সে কিসের ধর্ম মানব জীবনে তার প্রয়োজনীয়তা কোনখানে ? " শরৎচন্দ্র মানুষের চিন্তা চেতনায় ব্যথা বেদনা জাগিয়ে ধর্ম এবং সংস্কারকে আঘাত করেছেন। 


কার্বন ক্যাপচার: পরিবেশ কল্যাণমূলক এক অভিনব প্রক্রিয়া -
Tushar Gorai
Jan. 13, 2025 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:72 | likes:4 | share: 4 | comments:0

সাধারণ ব্যাকটেরিয়া থেকে জটিল উদ্ভিদ ও প্রাণী, সকল জীবের গঠনমূলক উপাদান হলো কার্বন। এটি বাস্তুতন্ত্রের কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি খাদ্য শৃঙ্খলার ভিত্তি গড়ে তোলে এবং বিভিন্ন প্রজাতির জন্য আবাসস্থল ও সম্পদ সরবরাহের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য বজায় রাখে।  

তবে, কার্বন ডাই অক্সাইড একটি গ্রিনহাউস গ্যাস যা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপ আটকে রাখে। মানব কার্যকলাপ, যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, বন উজাড় এবং অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ, CO₂ স্তরকে বাড়িয়ে তুলেছে, যা গ্রিনহাউস প্রভাবের ভারসাম্য নষ্ট করেছে। এর ফলে সাগরের স্তর বৃদ্ধি, বরফ গলে যাওয়া, মানব স্বাস্থ্য, বায়ুর গুণমান এবং খাদ্য ও পানির নিরাপত্তার উপর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।  

কার্বন ক্যাপচার ও সংরক্ষণ (CCUS)  :

কার্বন ক্যাপচার এবং সংরক্ষণ প্রযুক্তি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি শিল্প হাব থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ ধরে রাখতে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থার সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।  

কার্বন ক্যাপচারের প্রকারভেদ :

1. পোস্ট-কমবাস্টন ক্যাপচার: জ্বালানি পোড়ানোর পরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা শিল্প প্ল্যান্ট থেকে নির্গত গ্যাস থেকে CO₂ সংগ্রহ।  

2. প্রি-কমবাস্টন ক্যাপচার: জ্বালানি পোড়ানোর আগে CO₂ সংগ্রহ করা হয়, যা সাধারণত IGCC (ইন্টিগ্রেটেড গ্যাসিফিকেশন কম্বাইন্ড সাইকেল) প্ল্যান্টে ব্যবহৃত হয়।  

3. অক্সি-ফুয়েল কমবাস্টন: বাতাসের পরিবর্তে বিশুদ্ধ অক্সিজেন দিয়ে জ্বালানি পোড়ানো, যা প্রধানত CO₂ এবং জলীয় বাষ্প তৈরি করে।  


সংগৃহীত CO₂ এর সংরক্ষণ :

সংগৃহীত CO₂ গভীর ভূগর্ভস্থ গঠনে সংরক্ষণ করা হয়, যেমন:  

- তৈল ও গ্যাসের শূন্যক্ষেত্র: আগের ব্যবহৃত তেল ও গ্যাসের রিজার্ভ।  

- লবণাক্ত অ্যাকুইফার: লবণাক্ত পানিযুক্ত ভূগর্ভস্থ শিলা স্তর।  

- অখননযোগ্য কয়লার স্তর: গভীর বা ব্যয়বহুল কয়লা স্তর।  


CCUS-এর সুবিধাসমূহ : 

- গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস: CO₂ সংরক্ষণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ।  

- জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অব্যাহত রাখা: পরিবেশগত প্রভাব কমিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া।  

- অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি: নতুন চাকরি এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সৃষ্টি।  

চ্যালেঞ্জ এবং বিবেচনা :

- উচ্চ খরচ: CO₂ সংগ্রহ, পরিবহন এবং সংরক্ষণের জন্য ব্যয়বহুল।  

- পরিবেশগত ঝুঁকি: ভূগর্ভস্থ CO₂ সংরক্ষণে লিকেজ এবং ভূমিকম্পের সম্ভাবনা।  

- প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা: বড় আকারে বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ।  


ভারত ও বিশ্বের কার্বন ক্যাপচার প্রকল্প :

বিশ্বে:  

- পেট্রা নোভা (যুক্তরাষ্ট্র): কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে CO₂ সংগ্রহ করে ভূগর্ভস্থ সংরক্ষণ।  

- গর্গন (অস্ট্রেলিয়া): প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন থেকে CO₂ সংগ্রহ এবং সমুদ্রের গভীরে সংরক্ষণ।  

- স্লেইপনার (নরওয়ে): প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন থেকে CO₂ সংগ্রহ এবং লবণাক্ত অ্যাকুইফারে সংরক্ষণ।  

- বাউন্ডারি ড্যাম (কানাডা): কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে CO₂ সংগ্রহ করে ভূগর্ভস্থ সংরক্ষণ।  

- নর্দার্ন লাইটস (নরওয়ে): পূর্ণাঙ্গ CCS শৃঙ্খল তৈরির প্রকল্প।  

ভারতে:  

- ONGC-এর CO₂ ক্যাপচার এবং ব্যবহার: তেল ক্ষেত্র থেকে CO₂ সংগ্রহ এবং উন্নত তেল উৎপাদনে ব্যবহার।  

- কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কার্বন ক্যাপচার: পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে প্রযুক্তি পরীক্ষা।  

ভারতে কার্বন ক্যাপচার প্রকল্প সীমিত হলেও, ক্লিন এনার্জি এবং জলবায়ু ক্রিয়ার উপর সরকারের মনোযোগ এই খাতের উন্নয়ন সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছে। নবায়নযোগ্য শক্তির সাথে কার্বন ক্যাপচার একত্রিত করা একটি টেকসই, কম কার্বন ভবিষ্যতের পথে অবদান রাখতে পারে।  



তথ্যসূত্র: Science Reporter (Feb,2024)


ইন্টারস্টেলার -
Tushar Gorai
Jan. 12, 2025 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:187 | likes:8 | share: 3 | comments:0

পদার্থবিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলি রূপোলি পর্দায় তুলে ধরা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। 'বিজ্ঞান' এই শব্দটা শুনলেই মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার জটিল থিওরি এবং ভয়ংকর ক্যালকুলেশনের  কথা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সাধারণ দর্শক রোমান্টিক বা একশন সিনেমা বেশিই দেখতে পছন্দ করেন। বৈজ্ঞানিক জটিল তত্ত্ব এবং জাগতিক বিভিন্ন রহস্যময় ঘটনার প্রতি মানুষের কৌতুহল যে একেবারে নেই তা নয়।

২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে প্রডিউসার লিন্ডা অবস্ট কল্পবিজ্ঞান বিষয়ক একটি সিনেমা প্রস্তুত করার জন্য প্রস্তাব দিলেন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী কিপ স্টিফেন থর্নকে। এই বিজ্ঞানী জীবনের অনেকটা সময় জুড়ে গবেষণা করেছেন ব্ল্যাক হোল, ওয়ার্ম হোল, গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ ইত্যাদি বিষয়ে। এই ক্ষেত্রে তার জ্ঞান ও দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তিনি অবশ্য সিনেমা তৈরির সাথে যুক্ত হয়ে পড়বেন এ বিষয়ে তিনি কোনদিন কল্পনাও করেননি। 

পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান এবং তার ভাই স্ক্রিপ্ট রচয়িতা জোনাথান নোলানের সঙ্গে ভিসুয়াল এফেক্টসে কাজ করার জন্য খুব একটা বেগ পেতে হয়নি থর্ণকে। পরবর্তীকালে তিনি 'সাইন্স অফ ইন্টারস্টেলার' বলে একটি বই লেখেন যার মুখবন্ধ লিখেছিলেন স্বয়ং পরিচালক নোলান। ইন্টারস্টেলার ছবিতে 'গারগানটুয়া' ব্ল্যাক হোলের আশেপাশে ঘুরতে ঘুরতে মহাকাশযান 'এনডিওরেন্স' যে দৃশ্য দেখতে পাচ্ছে সেগুলোকে শর্ট অনুযায়ী ব্যাখ্যা করেন । ছবির একটা জায়গায় তিনি গ্রাভিটেশনাল লেন্সিং বিষয়টিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। মহাকাশে কোন ভারি বস্তুর পাশ দিয়ে আলো যাওয়ার সময় সেই ভারী বস্তুর মহাকর্ষের টানে আলোর বেঁকে যাওয়াকে গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং বলা হয়। অবশ্য পদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন ভারী বস্তুর কারণে উঁচু-নিচু স্থান কালের ক্ষেত্রে আলো রশ্মি চলতে গিয়ে বেঁকে যাওয়াকে গ্রাভিটেশনাল লেন্সিং বলে। 'গারগানটুয়ার' স্পিনিং এর কারণে যে গ্রাভিটেশনাল লেন্সিং হয় যার ফলে তার প্রতিবিম্বের অবস্থান ভিন্ন ধরনের বোঝানোর জন্য ছবি এঁকে তার সঞ্চার পথ নির্দেশ করেছেন থর্ন। ব্ল্যাক হোল ঘিরে যে আক্ক্রিশন ডিস্ক থাকে তার প্রকৃত তাপমাত্রা লক্ষ লক্ষ ডিগ্রিতে পৌঁছতে পারে তাছাড়া এক্স রশ্মি, গামা রশ্মি, বেতার তরঙ্গ এবং দৃশ্যমান আলোর মত বিভিন্ন বিকিরণ ঘটে। ব্ল্যাক হোলের মধ্যে এই তাপমাত্রাকে বোঝানোর জন্য তাপমাত্রার সমানুপাতিক উজ্জ্বল্য কে ভিসুয়াল ইফেক্টসের সাহায্য নেওয়া হলো।  'গারগানটুয়ার ' থেকে প্রচুর পরিমাণে দৃশ্যমান আলো বেরিয়ে এলেও এক্স রশ্মি বা গামা রশ্মি বেরোয় না তাই আপাতভাবে সেই বিকিরণের আবহে নিশ্চিহ্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না ছবির নায়ক কুপারের। গল্পে রসের মাধ্যমে বিজ্ঞান পরিবেশনায় বিস্ময়কর দক্ষতা দেখিয়েছেন বিজ্ঞানী থর্ন। সূক্ষ্মাতি-সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক নীতিগুলো মেনে তিনি তৈরি করেছেন সমস্ত ভিসুয়াল ইফেক্টস্। 

ব্যবসায়িক সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই এসব বৈজ্ঞানিক কঠিন তত্ত্বগুলি জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য এতটাও পরিশ্রম করেন না। তবে বিত্তশালী হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে ক্রিস্টোফার নোলানের এর মত অনেক পরিচালকই এই ঝুঁকিটা নেন। জনসমক্ষে জ্যোতি:পদার্থবিদ্যার এই সব জটিল রহস্যজনক ঘটনা সর্বসমক্ষে আসার ফলে তাদের মধ্যে এক বিস্ময়কর কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। সিনেমাই পারে মানুষের মধ্যে এমন কৌতূহল সৃষ্টি করার জন্য। জনজীবনে সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনস্বীকার্য।

রামধনু -
Tushar Gorai
Jan. 11, 2025 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:355 | likes:7 | share: 2 | comments:0

পৃথিবীর বহু অলৌকিক ঘটনা আমাদের নজরের আড়ালেই রয়ে যায় হয়তো আমরা সেগুলি ঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারিনি। এইসব জাগতিক ঘটনা আমাদের মনে এতটা নাড়া দেই না বা আমরা এইসব ঘটনাগুলি উপভোগ করতে পারিনি। পৃথিবীতে আলোর অবিশ্বাস্যকর কান্ডকারখানার উদাহরণ প্রচুর রয়েছে।আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে রামধনু এমন একটি ঘটনা।

রামধনুর বিজ্ঞান এতটাও জটিল নয় একটু বিশ্লেষণ করলেই জলবৎ তরলং। পুরাণে রামধনুকে ভগবানের ধনুক হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে যা কিনা মর্ত্য ও স্বর্গের মধ্যে যোগাযোগের পথ। অতীতে অনেক বিদগ্ধ পন্ডিতগণ এই বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রেখে গেছেন।নিউটন প্রথম দেখালেন সাধারন সূর্যালককে কাঁচের প্রিজমের মাধ্যমে বিচ্ছুরিত করে 7 টি রঙে ভাঙ্গা যায়।সেই বিচ্ছুরিত আলোককে পুনরায় সাধারণ আলোতে ফিরিয়ে আনেন। এইসমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে আলোক সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্তে আসেন।

আকাশের লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র জলকণার মধ্যে মেঘ - বাদলের বাধা ছাড়া পৌঁছতে পারলেই অনেকখানি কাজ হয়ে যায়।সূর্যালোক জলকনার মধ্যে প্রবেশ করে 7 টি রঙে ভেঙে যায়। যেখানে লাল  রঙের রশ্মি বিচ্ছুরিত হয় সবচেয়ে কম আর বেগুনি রঙের রশ্মি বিচ্ছুরিত হয় সবচেয়ে বেশি। এই পদ্ধতিতে লক্ষ লক্ষ জলকণার মধ্যে বিচ্ছুরিত হয় সূর্যালোক ভিন্ন ভিন্ন কোন দৃষ্টি করে। এই কোন ০ থাকে ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত যেকোনো হতে পারে তবে ৪২ এর থেকে কখনও বেশি হয় না। প্রতিটি রঙের রশ্মির জন্য নির্দিষ্ট বিচ্ছুরণ কোন থাকে যেমন বেগুনি রঙের রশ্মির জন্য সর্বোচ্চ কোন ৪০ ডিগ্রি।

রামধনুকে দেখার জন্য বেশ মজার কায়দা আছে। বৃষ্টিস্নাত পরিষ্কার আকাশে সূর্য যেদিকে আছে ঠিক তার উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়াতে হবে প্রথমে। সূর্য থেকে আগত রশ্মিগুলিকে একটি নির্দিষ্ট লাইন ভেবে আমার মাথার ঠিক উপর দিয়ে ছায়ার শেষ পর্যন্ত কাল্পনিক রেখা ধরলাম। এই কাল্পনিক রেখা যেন জলবিন্দু গুলি থেকে আগত রশ্মি গুলির সাথে সমান্তরাল হয়। এ কাল্পনিক রেখা কিন্তু রামধনুকে দেখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই কাল্পনিক রেখার সঙ্গে ৪২ ডিগ্রি কোনের থেকে একটু বেশি  কোনে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলে হয়তো আমরা রামধনুকে দেখতে পারব। যেখানে ৪০ ডিগ্রি থেকে একটু বেশি কোণে তাকিয়ে দেখলে আমরা বেগুনি রঙের প্রাধান্য দেখতে পাব যদিও বেগুনি রং রংধনুতে খুবই ম্লান ।


এখন তাহলে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এই রংধনুটা বাঁকানো কেন হল? তার কারণ হলো ৪২ ডিগ্রির বেশি কোণে সমস্ত দিক থেকে বিভিন্ন রঙের বৃত্তাকার পরিধি আমরা দেখতে পাই। সমস্ত রংধনুই যে পূর্ণ বৃত্তাকার পরিধি গঠন করে তা নয়। অপর্যাপ্ত পরিমাণে জলবিন্দু এবং মেঘ-বাদলের বাধা তার কারণ।

তথ্যসূত্র: For The Love Of Physics - Walter Lewin

Rainbow



আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929